বৃহঃস্পতিবার, ১২ই জুন ২০২৫, ২৯শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শোক জানিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে বার্তা ড. ইউনূসের
  • দুর্গত এলাকায় খাদ্যসংকট নিরসনে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে সরকার
  • ‘বিদেশে সম্পদ পাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে বাংলাদেশ’
  • বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
  • মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬১৪
  • তারেক রহমান চাইলেই দেশে আসতে পারেন
  • প্রধান উপদেষ্টা আজ কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন
  • পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা নিয়ে যা জানালেন প্রেস সচিব
  • পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করল যুক্তরাজ্য
  • ঢাকার বাতাস আজ ‘সহনীয়’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তায় দিনমজুর সাজেদুল

রংপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
১৫ জুন ২০২৩, ১৮:০০

সাজেদুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন

সাজেদুল ইসলাম নামের ছেলেটি কখনো অন্যের জমিতে ধান কেটেছেন, কখনো দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যেই কখনো খেতে না পেয়ে, কখনো আধপেটা খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। গত আট বছর ধরে ছোট্ট ঘরটার বারান্দায় ভাঙা চৌকিতে থাকা ও পড়াশোনার কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। সেই সাজেদুল এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গুচ্ছ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে এত সাফল্যের পরও ভর্তি ও থাকা-খাওয়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর।

 

সাজেদুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগে। ভর্তির পর প্রতি মাসে অন্তত ৫ হাজার টাকা লাগবে। আগামীকাল কী খাওয়া হবে, সেই চিন্তায় যে পরিবার অস্থির থাকে, সেই পরিবার এত টাকা কোথায় পাবে? ভর্তিসহ পড়াশোনার খরচের চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না তাঁর।

 

 

অদম্য মেধাবী সাজেদুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের খিয়ারপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা জাহিদুল হক ইটভাটার মৌসুমি শ্রমিক। মা শারজিনা বেগম গৃহিণী। ১ শতাংশ বসতভিটায় টিনের ছাপরা দেওয়া মাটির ছোট্ট একটি ঘর। এই ঘরে থাকেন সাজেদুলের মা-বাবা ও একমাত্র বোন জেরিনা খাতুন। ছনের ছাউনি দেওয়া বারান্দায় থাকার পাশাপাশি পড়াশোনা করেন সাজেদুল।

 

সাজেদুল ইসলাম ২০২০ সালে বদরগঞ্জ উপজেলার আজাদ শালবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৬৭ এবং ২০২২ সালে স্থানীয় লালদীঘি পীরপাল ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এরপর একটি ফাউন্ডেশনের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে ঢাকায় বিনা মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বি ইউনিটে মেধাতালিকায় ৭৩১তম হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে ১৬৯তম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিটে ৩৪৬তম হয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গুচ্ছ পরীক্ষায় ১১৫তম হয়েছেন সাজেদুল।

 

সাজেদুলের ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ার। নইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্য কোনো বিষয়ে ভর্তি হতে চান তিনি। পড়াশোনা শেষে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছা তাঁর।

 

 

এসএসসি ও এইচএসসিতে ফরম পূরণের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন প্রতিবেশী চাচা নুরন্নবী ও এমদাদুল হক। সাজেদুলের বাবা আবদুল গফুর বলেন, ‘ছইলটা (ছেলেটা) ইস্কুল-কলেজোত ভর্তি হয়া সপ্তাহে ৩-৪ দিন মাইনসের বাড়িত কাজকাম করিয়া পড়ার খরচ চলাইছে। এ্যালা শোনোচি ঢাকাত ভর্তি হইতে নাকি অনেক টাকা নাগবে। হামরা দিন করি দিন খাই। তোরায় কনতো, অতোগুলা টাকা হামরা কোনটে পাই!’

 

ছনের ছাউনি দেওয়া বারান্দায় থাকার পাশাপাশি পড়াশোনা করেন সাজেদুল

সাজেদুলের মা শারজিনা বেগম বলেন, ‘হামার খুব কষ্ট। খায়া না খায়া দিন কাটে। অর (সাজদুলের) ভর্তি করার কোনো বুদ্দি নাই হামার।’

 

লালদীঘি পীরপাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সাজেদুল অনেক মেধাবী ও বিনয়ী ছেলে। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরির কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে এত দিন। কলেজ থেকেও সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন সহযোগিতা পেলে ছেলেটা এগিয়ে যেতে পারবে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর