বৃহঃস্পতিবার, ১২ই জুন ২০২৫, ২৯শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শোক জানিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে বার্তা ড. ইউনূসের
  • দুর্গত এলাকায় খাদ্যসংকট নিরসনে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে সরকার
  • ‘বিদেশে সম্পদ পাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে বাংলাদেশ’
  • বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
  • মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬১৪
  • তারেক রহমান চাইলেই দেশে আসতে পারেন
  • প্রধান উপদেষ্টা আজ কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন
  • পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা নিয়ে যা জানালেন প্রেস সচিব
  • পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করল যুক্তরাজ্য
  • ঢাকার বাতাস আজ ‘সহনীয়’

অভিনয় নিয়ে তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
১৭ জুন ২০২৩, ১১:৪৩

গ্লেন্ডা জ্যাকসন

‘বাংলার মাটির চেয়ে ভালো ব্লাড ব্যাংক আর নেই/যেখানে প্রতি ফোঁটা রক্ত দশ ফোঁটা হয়ে যায়/তাই মানুষ আর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে যায় না/বাংলার অফুরান রক্ত মাটি শুষে নেয়।’ একাত্তরে বাংলাদেশের সমর্থনে লন্ডনের ইজলিংটনে স্যাডলারস ওয়েলস থিয়েটারে আয়োজিত ‘কনসার্ট ইন সিমপ্যাথি’তে আবেগঘন কণ্ঠে আবৃত্তি করেন অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন।
একাত্তরে বাংলাদেশের শরণার্থীদের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন গ্লেন্ডা, তাঁর আবেগঘন বার্তা লন্ডন ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখেন তিনি। অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কিংবা দুঁদে রাজনৈতিক—সব পরিচয় ছাপিয়ে বাংলাদেশের কাছে স্বাধীনতার অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবেই স্মরণীয় ছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার মারা যান গ্লেন্ডা জ্যাকসন। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
দীর্ঘ ছয় দশকের অভিনয়জীবনে গ্লেন্ডা জ্যাকসন দুটি অস্কার, তিনটি এমি, দুটি বাফটা ও একটি টোনি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। শৈশবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে গ্লেন্ডাকে; বাবা ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রি, মা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ক্ষুধার কষ্ট তাঁর চেয়ে কে আর বেশি বুঝবেন। ‘কনসার্ট ইন সিমপ্যাথি’তে অংশগ্রহণের প্রস্তাব পেয়ে দ্বিতীয়বার আর ভাবেননি গ্লেন্ডা। শরণার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে ছুটে আসেন কনসার্টে।


১৯৭১ সালে স্যাডলারস ওয়েলস থিয়েটারে মহড়ার সময় (বাঁ থেকে) কনসার্টের আয়োজক বীরেন্দ্র শঙ্করের সঙ্গে গ্লেন্ডা জ্যাকসন ও ক্লিও লাইন

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের আট শহরে কনসার্ট হয়েছে, এর মধ্যে লন্ডনের কনসার্টে তিনটি কবিতা আবৃত্তি করেছেন গ্লেন্ডা। কনসার্টের আয়োজক ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্করের ভাতিজা বীরন্দ্র শঙ্কর।
১৯৩৬ সালের ৯ মে উইরালের বার্কেনহেডে জন্মগ্রহণ করেন গ্লেন্ডা। খুব এটা পড়াশোনা করতে পারেননি। আর্থিক অনটনে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তাঁকে জীবিকার সন্ধানে নামতে হয়। একটি ফার্মেসিতে বছর দুয়েক কাজও করেন, তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। চাকরি ছেড়ে ১৯৫৪ সালে একটি স্থানীয় নাটকের দলে যোগ দেন গ্লেন্ডা, ‘অভিনয় নিয়ে আমার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। তবে ফার্মেসির চেয়ে সেই জায়গায় স্বস্তিবোধ করছিলাম।’
লন্ডনের রয়েল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে (আরএডিএ) বৃত্তি পান, ১৯৫৭ সালে সেখানে নাট্যকার টেরেন্স রটিগানের সেপারেট টেবিলস নাটকে অভিষেক ঘটে তাঁর। এর ছয় বছর পর তাঁকে রয়েল শেক্‌সপিয়ার কোম্পানিতে নিয়ে আসেন নির্দেশক পিটার ব্রুক। পিটার ব্রুকের নির্দেশনায় মারাট/স্যাড-এর মূল চরিত্রে অভিনয় করে বাজিমাত করেন গ্লেন্ডা। বলা হয়, এই নাটকই তাঁকে মঞ্চে অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।


উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের কিং লেয়ার নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছেন গ্লেন্ডা জ্যাকসন। এটিকেই তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয় হিসেবে বিবেচনা করেন সমালোচকেরা। সচরাচর কিং লেয়ার চরিত্রে পুরুষ শিল্পীদের দেখা যায়, তবে প্রথা ভেঙে চরিত্রটি ধারণ করে মঞ্চে এসে হইচই ফেলে দেন গ্লেন্ডা জ্যাকসন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের নাট্যকার ইউজিন ও’নিলের স্ট্রেঞ্জ ইন্টারলুড-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি।
এর বাইরে ১৯৬৩ সালে দ্য স্পোর্টিং লাইফ সিনেমায় একটি ছোট্ট চরিত্রে বড় পর্দাতেও অভিষেক ঘটে তাঁর। সিনেমা আর মঞ্চ—দুই মাধ্যমেই সমানতালে কাজ করে গেছেন গ্লেন্ডা।
১৯৬৯ সালে ডি এইচ লরেন্সের উপন্যাস ওমেন ইন লাভ অবলম্বনে একই নামে নির্মিত সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকমহলে সাড়া ফেলেন গ্লেন্ডা জ্যাকসন। সিনেমাটির জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে প্রথমবার অস্কার পান তিনি। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আরেক সিনেমা আ টাচ অব ক্লাস–এ অভিনয় করে আবারও অস্কার পান তিনি।
বছর দুয়েক পর বিবিসির সিরিজ এলিজাবেথ আর–এ রানি এলিজাবেথের চরিত্রে অভিনয় করেন গ্লেন্ডা জ্যাকসন। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্টিভ সিনেমায় ব্রিটিশ কবি স্টিভ স্মিথ চরিত্রে অভিনয় করে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার বাগিয়েছেন তিনি। দ্য প্যাট্রিসিয়া নিল স্টোরি-তে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য এমিতে মনোনয়ন পান গ্লেন্ডা।


ছয় দশকের ক্যারিয়ারে সানডে ব্ল্যাডি সানডে সিনেমার জন্য বাফটা পুরস্কার, ড্রামা সিরিজ এলিজাবেথ ইজ মিসিং–এর জন্য এমি অ্যাওয়ার্ডস, মিউজিক্যাল অর কমেডি সিনেমার জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার পেয়েছেন গ্লেন্ডা জ্যাকসন।
গ্লেন্ডা জ্যাকসন ব্যক্তি হিসেবে রসবোধসম্পন্ন ছিলেন। বেশ কয়েকটি কমেডি শো এবং সিনেমাতেও দেখা গেছে তাঁকে। সত্তর ও আশির দশকে তাঁকে ন্যাস্টি হ্যাবিটস, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডসহ বেশ কয়েকটি কমেডি সিনেমাতেও পাওয়া গেছে গ্লেন্ডাকে।
৫৬ বছর বয়সে ১৯৯২ সালে অভিনয় ছেড়ে লেবার পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হন গ্লেন্ডা জ্যাকসন। ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি লেবার পার্টির হয়ে নর্থ লন্ডনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সরকারের কনিষ্ঠ পরিবহনমন্ত্রী ছিলেন বছর দুয়েক।



পরে গ্লেন্ডা আবারও অভিনয়ে ফিরেছিলেন। ২০১৬ সালে মঞ্চনাটকে অভিনয় করে সাড়া ফেলেন গ্লেন্ডা জ্যাকসন। ২০২০ সালে টিভি নাটক এলিজাবেথ ইজ মিসিং–এ অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি বাফটা পুরস্কার জিতে নেন।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর