শুক্রবার, ১৩ই জুন ২০২৫, ২৯শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শোক জানিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে বার্তা ড. ইউনূসের
  • দুর্গত এলাকায় খাদ্যসংকট নিরসনে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে সরকার
  • ‘বিদেশে সম্পদ পাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ কথা ভাবছে বাংলাদেশ’
  • বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
  • মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬১৪
  • তারেক রহমান চাইলেই দেশে আসতে পারেন
  • প্রধান উপদেষ্টা আজ কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন
  • পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা নিয়ে যা জানালেন প্রেস সচিব
  • পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করল যুক্তরাজ্য
  • ঢাকার বাতাস আজ ‘সহনীয়’

আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত:
৩ জুলাই ২০২৩, ২২:৩২


জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গু রোগের মৌসুম হলেও বর্তমানে প্রায় সারা বছরজুড়েই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই হানা দেওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।

বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ করে আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, একদিকে বৃষ্টিপাত, আরেকদিকে দেশজুড়ে ঈদের ছুটিতে অফিস আদালত বন্ধ এবং বাসাবাড়িতে কেউ না থাকায় এসব স্থানে বৃষ্টির পানি জমে ডেঙ্গু মশা আরও বেশি বিস্তার লাভ করবে। ফলে ডেঙ্গু রোগী যেমন বাড়বে, সেই সাথে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও বাড়বে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে ৪৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট নয় হাজার ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সোমবার (৩ জুলাই) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এ বছর মোট ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জুন মাসে সারা দেশে সর্বমোট ৫ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৩৪ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬৬ জন, মার্চ মাসে ১১১, এপ্রিল মাসে ১৪৩ এবং মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই ৫ মাসে মোট ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ২২ জনের। এদিকে শুধু জুন মাসে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় প্রায় ৬ হাজার জনের। সে হিসেবে বছরের প্রথম ৫ মাসের তুলনায় এক মাসেই (জুন) ডেঙ্গু শনাক্ত হয় প্রায় তিনগুণ।

এ বছর ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী  বলেন, দুটো বিষয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। একটি হচ্ছে ঈদের ছুটিতে পাঁচ থেকে সাত দিন, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় অনেক অফিস আদালত, বাসাবাড়িতে লোকজন থাকছে না, এসব স্থানে বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার প্রজননের একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যার ফলে ডেঙ্গু বিস্তারের একটি সমূহ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও এখন বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টি পানি বিভিন্ন জায়গায় জমে এডিস মশার প্রজনন বেশি হয় এবং ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে। এর সাথে সাম্প্রতিক বন্ধের প্রভাবে সামনের দিনে ডেঙ্গুর একটি বড় অবনতি দেখবো বলে আশঙ্কা করছি। যদি আমরা এই প্রজননস্থলগুলো ধ্বংস করতে না পারি, প্রাপ্তবয়স্ক মশা এবং লার্ভা যদি বিনষ্ট করতে ব্যর্থ হই তাহলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি হবে বলে আশঙ্কা করছি।

বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আশংকা প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ঈদ পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে আগামী মাসে ডেঙ্গু খুবই বেড়ে যাবে। এর কারণ হিসেবে আমাদের ল্যাবে, এডিস মশার ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত; এই কয়েকটি বিষয়কে বিশ্লেষণ করে কম্পিউটার সিমুলেশন মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ডেঙ্গু আরও অনেক বেড়ে যাবে এবং আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত এর অন্যতম একটি কারণ। ঈদের ছুটি থাকার কারণে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এসব অফিস আদালত এবং বাসাবাড়ির বিভিন্ন স্থানে, পাথরে বৃষ্টির পানি জমা হয়েছে। এসব স্থানে এডিস মশার নীরবিচ্ছিন্ন বিস্তার হচ্ছে। এই মশাগুলোই শিগগিরই উড়ন্ত মশায় রূপান্তর হবে এবং ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর মতো উপযোগী পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। সেজন্য ঈদ পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু আরও বাড়বে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের ডেঙ্গুর হট স্পট ম্যানেজ করা দরকার। ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা বের করে, ওই ব্যক্তির বাড়ির আশেপাশে ফগিং করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। কারণ এই উড়ন্ত মশাগুলোই এই মুহূর্তে ইনফেক্টেড মশা, এই মশাগুলো যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গু ছড়াবে।

জনসাধারণের সচেতনতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগরবাসীকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্পৃক্ত হতে হবে। তাদের বাসাবাড়ির ছাদে, আঙিনায় কিংবা অন্য কোনোখানে যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগামী মাসে সারা বাংলাদেশের সবকটি জেলায় ডেঙ্গু ছড়াবে বলে আমরা মনে করছি। ফলে প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু প্রিভেনশনের প্রস্তুতি আমাদের রাখা দরকার।

চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর প্রকোপ কয়েকগুণ বেশি। ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিতে হবে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর