সোমবার, ১৯শে মে ২০২৫, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • জরুরি সভা ডাকলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
  • ১০ হাজারেরও বেশি হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত
  • ইশরাকের শপথ নিয়ে আইনি জটিলতা আছে
  • ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন
  • পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে ৪-৫ বছর লেগে যাবে
  • নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতারের কারণ জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়ে ইসিকে লিগ্যাল নোটিশ
  • দেশের ১৮ অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস
  • ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ৭ দেশের ১৯ হাজারেরও বেশি প্রবাসী
  • বিশেষ অনুমতি ছাড়াই কুয়েতের ভিসা সুবিধা পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা

হাওড়ে হারুনের শতকোটি টাকার ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১৭ আগষ্ট ২০২৪, ১৪:১৭

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়াসহ অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নামে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল একটি প্রমোদাগার। হেলিপ্যাড ও অত্যাধুনিক সুইমিং পুলসহ কী নেই সেই রিসোর্টে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও বিত্তশালীদের আনন্দ-ফুর্তির জন্য অত্যন্ত নিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছিল হারুনের এই রিসোর্ট।

হারুনের নিজ গ্রামের ৪০ একরের বেশি আয়তনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি উদ্বোধন করা হয়।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে হারুনের পরিবারের মাত্র ৫ থেকে ৭ একর জমি থাকলে বাকি জমি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দখল করেছেন তিনি। এছাড়া যেসব মালিক জমি বিক্রি করেছেন তারা প্রকৃত মূল্য পাননি। প্রকৃত মালিকদের কেউ ১০ লাখের মধ্যে ১ লাখ, কেউ ২০ লাখের মধ্যে ২ লাখ এই হারে টাকা পেয়েছেন। এখনো অন্তত ১০ থেকে ১২ জন দাম না পাওয়ায় তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি।

হারুনের প্রতরণার শিকার হওয়া তাদের মধ্যের একজন মিঠামইন সদর ইউনিয়নের গিরীশপুর গ্রামের দিলীপ কুমার বণিক। তিনি বলেন, ‘হারুন রিসোর্টের কথা বলে তার এক একর ১০ শতাংশ জায়গা নিয়েছেন। জমির কোনো দরদামও নির্ধারণ করা হয়নি। আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অথচ জমির দাম হবে অন্তত ২০ লাখ টাকা। আমার মতো এমন অন্তত আরও ১২ জন রয়েছেন, যাদের নামমাত্র টাকা দিয়ে জমি নিয়ে গেছে হারুন।’

জনরোষে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে সেদিন থেকেই হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে রিসোর্টে বুকিং চালু রয়েছে।

দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হারুন ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি পান। অথচ তার বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় হারুন। দ্বিতীয় জিয়াউর রহমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক। তৃতীয় জিল্লুর রহমান পুলিশের ইনস্টেকটর হিসাবে কর্মরত। এ ছাড়া হারুনের প্রতিষ্ঠিত বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’-এর এমডি হিসাবে আছেন সবার ছোট শাহরিয়ার।

যেভাবে হারুনের উত্থান

২০১১ সালের ৬ জুলাই বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক সংসদ ভবনের সামনে পুলিশের পিটুনির শিকার হন। সেসময় তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার হারুন অর রশীদ ওই ঘটনার নেতৃত্ব দেন। জয়নাল আবেদন ফারুককে ধাওয়া করে জামা খুলে নেওয়ার একটি ভিডিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হলে তা ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই এই পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাব পুলিশ বিভাগে ছড়িয়ে পড়ে।

২০তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের চাকরি নেওয়া হারুন ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের বাহাদুর-অজয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একসময় চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন। ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।

একই বছরের ২ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক দিন আগে হারুনকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করে সরকার। নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেন হারুন। হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি নারায়ণগঞ্জের অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দেন।

২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনার জন্ম দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়েছিল। পরে আবার তাকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ডিআইজি হিসেবে ২০২২ সালের ১১ মে পদোন্নতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ঢাকার ডিবির দায়িত্ব পান। এর আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্ব পাওয়ার পর ডিবি অফিস পরিচিতি পায় ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ হিসেবে। এর কারণ, হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে দুপুরে খাওয়াতেন। সেসব ছবি নিজের ফেইসবুকে শেয়ার করে তিনি আলোচনার জন্ম দেন।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর