বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • শ্রমিকদের আগের অবস্থায় রেখে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়
  • শ্রমিকদের ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ
  • ‘শ্রমিক-মালিকদের যৌথ প্রচেষ্টাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে’
  • মালিক-শ্রমিক এক কাতারে দাঁড়ালেই সমাজের চিত্র বদলে যাবে
  • জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেলো বরিশালের আমড়া
  • বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে ঢাকা, বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’
  • বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার
  • যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা
  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ
  • সরকারের প্রচেষ্টা হচ্ছে মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সমুন্নত রাখা

আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ উদ্‌যাপন

সরকারে নারীদের ন্যায্য অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়নি: শিরীন হক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত:
২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮:৩৩

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল এই সংস্কারের সুযোগ এসেছে। আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। দেশে বিরাজমান বৈষম্যগুলোকে চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে। দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ কে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে এসব কথা বলেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক।

তিনি বলেন, “আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন। এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা। অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।”

এসময় অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবছর পদক গ্রহণ করেন যথাক্রমে ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন এবং আফরোজা খন্দকার।

দিবস উদ্‌যাপন আয়োজনে নারীদের সফলগাঁথা প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন। একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এই আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা। এসময় দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের মুখোমুখি হওয়া কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে সেলক্ষ্যে সকল ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়ানোর পরামর্শ আসে আলোচনা থেকে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ‍উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন? জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।”

“সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো ‍গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে। আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এতো তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।” তিনি যোগ করেন।

নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক (প্রকল্প-২) আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, “জনসংখ্যার বিচারে নারীরা সমান সমান হওয়া সত্ত্বেও নারী বহুক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন। এই জায়গাগুলো নিরুপন করে নারী উন্নয়নে কাজ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থ ও দায়বদ্ধতা থেকে সরকারকে আরও গুরুত্বারোপ করতে হবে।”  

নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির। তিনি বলেন, “দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।” এসময় নারী উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি। 

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (উপসচিব) মো. মনির হোসেন বলেন, “নারী উন্নয়নে সরকারের যেসব আইন-কানুন রয়েছে তা আপডেট করার কার্যক্রম চলছে। একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে আমাদের কাজ করতে হবে। সরকারের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে হয়ে দেশগঠনে কাজ করে যাবো।”

নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে গণমাধ্যমে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, “গণমাধ্যম পেশায় নারীদের অগ্রগতি ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণে এক্ষেত্রে সমাজে সর্বোতভাবে পরিবর্তন আনতে হবে।”

ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর জেন্ডার টিম লিডার শারমিন ইসলাম বলেন, “বৈশ্বিক পরিমণ্ডলের তুলনায় আমাদের নারীদের উন্নয়নের চিত্র ভিন্ন। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এক্ষেত্রে সরকারের নীতি-নির্ধারণ জায়গায় বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে যে নারী উন্নয়নের প্রাধান্য দিতে হবে।”  

পুরুষ জাতীয় অ-১৮ যুব হ্যান্ডবল দলের কোচ ডালিয়া আক্তার বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সফলতাই বেশি। নারীর উন্নয়নে আমাদের মানসিকতা ঠিক করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি হবে। পাশাপাশি আমাদের প্রচলিত শিক্ষায় ক্রীড়াক্ষেত্রকে প্রাধান্য দিতে হবে।”

 এছাড়াও নারী দিবসকে সামনে রেখে সচেতনতা বৃদ্ধিতে একশনএইড বাংলাদেশ-এর বিশেষ পডকাস্ট সিরিজ ‘না ও নারী’ থেকে আসা পরামর্শগুলো ভিডিও আকারে তুলে ধরা হয় এই অনুষ্ঠানে।

 অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপার্সন ইব্রাহিম খলিল আল জায়াদ।  

 এছাড়াও অনুষ্ঠানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য মেঘনা গুহঠাকুরতা; দেশ গ্রোথ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভিদিয়া অম্রিত খান; মাঝামাঝি-এর প্রতিষ্ঠাতা জারিন জেবা খানসহ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, একশনএইড বাংলাদেশ-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের তরুণ নেতা, নারী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটির নেতা, বিশিষ্ট উদ্যোক্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর