প্রকাশিত:
২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:২১
একজন পুলিশ কর্মকর্তার তদবির-সুপারিশ বানিজ্যে অতিষ্ঠ বরিশাল বিভাগের পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম নাজিমুল হক। তিনি বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে কর্মরত।
একাধিক সূত্রের তথ্য বলছে, নাজিমুল হক গেল অক্টোবরের শেষের দিকে বরিশালে যোগদানের পর থেকেই বালু মহাল দখলে সহযোগীতা এবং পুলিশের বদলি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকেন। প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। এছাড়া, কিছু দিন আগে বরিশালে একটি ডাকাতির ঘটনায় আসামির পক্ষ নিয়ে পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। শোনা যায়, নাজিমুল হক নিজেকে বিএনপিপন্থি হিসেবে জাহির এবং তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে প্রচার করে থাকলেও বিসিএস ২৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নির্দ্বিধায় একের পর এক পদোন্নতি নিয়েছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নাজিমুল হক বরিশাল জেলার স্থানীয় একটি বালুখেকো চক্রকে নিয়মিত ঘুষের মাধ্যমে শেল্টার দেন। ওই চক্রের কাছ থেকে দৈনিক মাসোহারা নেন তিনি। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বরিশাল বিভাগজুড়ে। শুধু বরিশাল জেলা নয়, অনেক দূরত্বে থাকা পিরোজপুর জেলার বালুখেকোদের শেল্টার দিতেও তিনি সেখানকার জেলা প্রশাসনের কাছে তদবির করেন। এ বিষয়ে দুই জেলা প্রশাসকের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তারা ডিআইজি নাজিমুলের তদবির করার সত্যতা স্বীকার করেন, তবে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
শুধু বালুখেকোদের শেল্টার নয়, নিজ দপ্তরেও ব্যাপক সমালোচিত নাজিমুল হক। অভিযোগ আছে, বদলি বাণিজ্যের আধিক্যের কারণে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়টি এখন বদলি দপ্তরে পরিণত হয়েছে। একজন উর্ধতন কর্মকর্তার কারণে ওই অফিসটি জুনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে আতঙ্কের স্থানে পরিণত হয়েছে। সূত্র জানায়, নাজিমুল হক ন্যায় অথবা অন্যায়, যেই নির্দেশনাই দিক, তা না মানলে নেমে আসে ব্যাপক চাপ, কথায় কথায় দেয়া হয় বদলির হুমকি।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বরিশালে বদলি বাণিজ্যের শীর্ষে আছেন অতিরিক্ত ডিআইজি নাজিমুল হক।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, নাজিমুল হকের কাছে একজন কনস্টেবলকে বদলির জন্য পাঠানো হলে তিনি টালবাহানা করে বহু দিন ঘুরিয়েছেন। অথচ, পরে নাজিমুল হকের এক দালালের মাধ্যমে টাকা দেয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ঐ কনস্টবল বদলির আদেশ হয়ে গেছে। টাকা ছাড়া তিনি কোনো বদলি করেন না। আবার কাউকে ক্ষিপ্ত হয়ে বদলি করলে, পূর্বের স্থানে ফিরে আসতেও দিতে হয় টাকা।
বরিশাল ও পিরোজপুরের জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, উর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি সুপারিশ করেন। যেটা যৌক্তিক ও নিয়মের মধ্যে থাকে সেই সুপারিশ রাখা হয়। নিয়মের বাইরে কিছু বললে তো রাখা সম্ভব হয় না।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নাজিমুল হকের মূল বাড়ি পিরোজপুরে কিন্তু পুলিশে চাকরি নিয়েছিলেন খুলনার ঠিকানা দিয়ে। নাজিমুল হক পিরোজপুর নিজ জেলায়ও চাকরি করেছেন। তখন তিনি পিরোজপুরে ইনসার্ভিস সেন্টারের পুলিশ সুপার ছিলেন। নাজিমুল হকের বাড়ি পিরোজপুর হওয়ায় বরিশাল বিভাগের অনেকের সাথেই পূর্ব পরিচিত তিনি। তাই তাদেরকে সেল্টার দিতে সুবিধা হয় তার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নাজিবুল হকের শেল্টারে বরিশালে নানাবিধ অপকর্ম করে বেড়ান বরিশালের বিতর্কিত কিছু ছাত্রদল নেতা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বরিশাল বিভাগের বড় বড় সকল টেন্ডারে এবং বদলি বাণিজ্যে বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নাজিমুল হকের তদবির রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি দপ্তর প্রধানের সাথে কথা বললে তারা নাজিমুল হকের টেন্ডার বাণিজ্যে হস্তক্ষেপ এবং বদলির তদবিরের কথা স্বীকার করেন।
বরিশাল পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে চলমান পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজির রয়েছে প্রায় একশত কনস্টেবল নিয়োগ প্রার্থী। তাদের নিয়োগে বিভিন্ন মাধ্যমে দৌঁড়ঝাপ করছেন নাজিমুল হক।
বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নাজিমুল হকের সকল অপকর্ম, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য ও তার অবৈধ অর্থের উৎস ও পরিমাণ নিয়ে এবং পুলিশ-প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, তাকে নিয়ে আমাদের ভেতরে অনেক অস্বস্তি আছে। এসব বিষয় উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি নাজিমুল হকের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলোর কোনো কিছু সত্য নয়। সব মনগড়া তথ্য। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অপপ্রচার চালাচ্ছে কোনো একটি গ্রুপ। কারো জন্য কখনো ফোন করে বা সরাসরি কোনো অফিসে কখনো সুপারিশ করিনি।আর রেন্জ অফিসে এডমিন হিসেবে বদলি আমার হাত থেকেই হয়। সেক্ষেত্রে কেউ আশানুরূপ বদলী না পেলে সংক্ষুব্ধ হতে পারে। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি মোটেও সত্যি নয়।
মন্তব্য করুন: