প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:০৩
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ও গাছ থেকে আম পাড়া নিয়ে বিরোধের জেরে পৃথক স্থানে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে ও রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেট এলাকায় এবং আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী গ্রামে।
জানা যায়, ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এদের মধ্যে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন পুখুরিয়া গ্রামের সুলতান মাতুব্বর (৫০) ও অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের ইয়াকুব মিয়া (৫৫)। এই দু'পক্ষ মাঝে মাঝে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকে দুই পক্ষের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। শনিবার রাত ১০ টার দিকে ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের শতাধিক লোক পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেটের ১২-১৩ টি দোকান কুপিয়ে ক্ষতিসাধন করে। এরপর দুই পক্ষের কয়েকশত লোক ঢাল, সড়কি, নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের শত শত লোক ঢাল, সড়কি, রামদা নিয়ে খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামের ইয়াকুব মিয়ার সমর্থকদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে।
এ সময় খাঁ কান্দা নাজিরপুর গ্রামের শাহজাহান সরদারের গরু ঘর, রান্না ঘর, হায়দার সরদারের দুটি খড়ের গাদা, সাইদুল সরদারের একটি পাটকাঠির গাদা আগুনে পুড়ে গিয়েছে। ১০ টির অধিক বাড়ি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের চিহ্ন রয়েছে।
বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, সুলতান মাতুব্বরের কয়েকশত সমর্থক ঢাল, সড়কি ও রামদা নিয়ে এসে রবিবার সকালে এ অগ্নিসংযোগ করেছে। এর পাশাপাশি জহুরুল সরদার, নুরা সরদার, সাইদুল সরদার, তাইজেল সরদার, হায়দার সরদার, বক্কার সরদার, রুমি সরদার, ইয়াদ আলী সরদারের বাড়িসহ ১০-১২ টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
পুখুরিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন হাজারি মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, দুই পক্ষের আগে থেকে বিরোধ চলছিল। শনিবার রাতে ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের লোকজন বাজারে এসে সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের লোকজনের ১২-১৩ টি দোকান কুপিয়ে যায়। আজ আবার সুলতান মাতুব্বরের পক্ষের লোকজন ইয়াকুব মিয়ার পক্ষের লোকজনের বাড়ি ঘরে হামলা করেছে।
এবিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে। ডিবি পুলিশের টিমও কাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এঘটনায় ওই এলাকা থেকে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে রবিবার(২৭ এপ্রিল) সকালে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী গ্রামে আম পাড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৫ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, শনিবার সুয়াদি গ্রামের শাহজাহান মিয়ার আম গাছ থেকে একই এলাকার রবিউল মিয়া আম পাড়ে। এই আম পাড়াকে কেন্দ্র করে রবিউল মিয়ার সঙ্গে শাজাহান মিয়ার মেয়ে রুমার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এই ঘটনার একদিন পরে রবিবার সকালে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সরকি, রামদা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে চুন্নু মিয়া(৪২), ইয়াছিন(১৭), শাহাদাত মিয়া, মিরান মিয়া(৬৫), আলি মিয়া(৭৮), শহিদুল ইসলাম(২২), লাভলু(৫৫), শাহাবুদ্দিন(৩২), সোহাগ(৩৫), বাবলু মিয়া(৪৫), সাগর মিয়া(৩০), এনায়েত(২৬), সজিব(২৫), নাজমুল হুদা(২১), বোরহানউদ্দিন(৬০), এদেরকে ভাংগা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত আবুল বাশার(৩০), রহমান মিয়া(৩২), সোহাগ মিয়া(৪০), রহিমা বেগম(৩০), শাহিন মিয়া(২৮) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে ভাংগা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আশরাফ হোসেন বলেন, সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন: